শীর্ষনিউজ, ঢাকা
নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ দাবি জানিয়ে গত তিন দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি চলছে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে আজ শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসছে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে বৈঠকের কর্মসূচির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি কিছুৃ জানাননি।
এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল শুক্রবার থেকে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে। উল্লেখ্য যে ইতিমধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। চলমান তদন্তে সহযোগিতা করার পরিবর্তে, দলটি দেশের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার জন্য স্পষ্টতই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
সরকারের পক্ষ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই অস্থায়ী সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের প্রতিনিধি দল, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং সেনাবাহিনীর প্রধান।
৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন।
জুলাই বিপ্লবপরবর্তী পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির সূচনা হয়। তবে বিষয়টিতে সরকারের তৎপরতা সেভাবে শুরু না হলেও এবার নতুন করে আন্দোলন শুরু হওয়ায় নড়ে চড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে সরকার সংশ্লিষ্টদের। নতুন এই আন্দোলনের গতি এবং সবশেষ সরকারের পদক্ষেপ কী হয়- তার ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি।
(শীর্ষনিউজ/১০মে২০২৫/১৫৩২/ক.ম)